অ্যালোপ্যাথি ও হোমিওপ্যাথি দুই ধরনের চিকিৎসাতেই কিছু ব্যক্তি বিশ্বাস করেন। তাঁরা বিভিন্ন অসুখে দুই চিকিৎসাই একসঙ্গে করতে চান। এখন প্রশ্ন হল, একসঙ্গে কি এই দুই ধরনের ওষুধ খাওয়া যায়? আসুন উত্তর জানা যাক চিকিৎসকের মুখে।
সভ্যতার বয়স যত বাড়ছে, ঠিক ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে রোগের সংখ্যা। আগে যেখানে একটু বেশি বয়সে রোগ ধরা পড়ত, সেখানে এখন কম বয়সেই হচ্ছে বিভিন্ন অসুখ। তাই চিকিৎসাবিজ্ঞানীরাও গবেষণায় ব্যস্ত। নতুন নতুন রোগকে বশে আনার কৌশল তাঁরা বের করে চলেছেন।
এদিকে রোগাক্রান্ত হওয়ার পর আমাদের হাতে চিকিৎসার অনেক বিকল্প রয়েছে। এই যেমন কিছু ব্যক্তি অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসায় বিশ্বাসী। আবার কিছুজন বিশ্বাস করেন হোমিওপ্যাথিতে। আবার এই দুটি চিকিৎসাপদ্ধতিতে অনেকে একসঙ্গে বিশ্বাস রাখেন।
আসলে মডার্ন মেডিসিনে চিকিৎসা খরচ কিছুটা বেশি। সেইদিক থেকে দেখতে গেলে হোমিওপ্যাথি ওষুধের দাম কম। তাই কিছু কিছু অসুখে অনেকেই হোমিওপ্যাথিতে বেশি ভরসা রাখেন।
আবার একদল রয়েছেন যাঁরা হোমিওপ্যাথি ও অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা একসঙ্গে করতে চান। এমন মিলিত চিকিৎসার সাহায্য নেওয়া কি আদৌ যুক্তিসঙ্গত? সেই বিষয়েই মুখ খুললেন পিসিএম হোমিওপ্যাথি মেডিক্যাল কলেজের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ডা: আশিস শাসমল।
হোমিওপ্যাথি ও অ্যালোপ্যাথি ওষুধ একসঙ্গে খাওয়া যায়?
ডা: আশিস শাসমলের কথায়, একদম খাওয়া যায়। হোমিও এবং মডার্ন মেডিসিনের মধ্যে কোনও বিরোধ নেই। আমার কাছে এমন প্রচুর রোগী আসেন যিনি অ্যালোপ্যাথি খেয়ে চলেছেন। পাশাপাশি আমিও ওষুধ দিচ্ছি। তাঁরা হোমিও ওষুধ খেয়ে দিব্যি সুস্থ রয়েছেন। আসল কথা হল, রাস্তা দিয়ে গাড়ি, বাইক দুইই যায়। কিন্তু নিজের নিজের পথে গেলে ধাক্কা লাগার কোনও আশঙ্কাই থাকে না। অ্যালোপ্যাথি ও হোমিওপ্যাথির ক্ষেত্রেও বিষয়টি তেমনই।
দুশ্চিন্তা নয়
ডা: শাসমলের কথায়, এখন কম বয়সেই ক্রনিক রোগ কামড় দিচ্ছে। ফলে রোগী আমাদের কাছে আসার আগে বেশিরভাগ সময়ই অ্যালোপ্যাথি ওষুধ খেতে থাকেন। তারপর আমরা রোগ বুঝে ওষুধ দিই। একটা উদাহরণ দিলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে। ধরুন কোনও ব্যক্তির ডায়াবিটিস রয়েছে। তিনি অ্যালোপ্যাথি খান। এখন তাঁর পায়ে ব্যথা হয়েছে। এই সমস্যায় তিনি হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করাতে আমার কাছে আসতেই পারেন। তখন আমরা সেই রোগের চিকিৎসা করি। অর্থাৎ ডায়াবিটিসের জন্য অ্যালোপ্যাথি চলছে, আর ব্যথার জন্য হোমিও।
ক্রনিক রোগের ক্ষেত্রে চিকিৎসার ধরন আলাদা
এমনটা হতেই পারে যে রোগী বিশেষ একটি ক্রনিক অসুখের জন্য দীর্ঘদিন অ্যালোপ্যাথি ওষুধ খাচ্ছেন। এখন তিনি সেই অসুখে হোমিওপ্যাথি করাতে চান। এমন সব ক্ষেত্রে অ্যালোপ্যাথি ওষুধ চলার পাশাপাশি হোমিওপ্যাথি দেওয়া হয়। ধীরে ধীরে রোগ নিয়ন্ত্রণে এলে অ্যালোপ্যাথির ডোজ কমানো হয়। তারপর রোগীকে একদম অ্যালোপ্যাথি ছাড়িয়ে দেওয়া হয়, এমনটাই জানালেন ডা: আশিস শাসমল।
কিছু নিয়ম মানতে হবে
হোমিওপ্যাথি ও অ্যালোপ্যাথি ওষুধ একসঙ্গে খেতে গেলে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়, এমনই মত ডা: শাসমলের। এক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথি ওষুধ খাওয়ার মোটামুটি ৩০ মিনিট পর অ্যালোপ্যাথি ওষুধ খেতে হয়। তাহলেই সমস্যার আশঙ্কা থাকে না। এছাড়া হোমিওপ্যাথি ওষুধ সাধারণত খালি পেটে বেশি কাজ করে। তাই খাওয়ার আগে এই ওষুধের ডোজ গ্রহণ করুন। তবেই রোগ থেকে সেরে উঠবেন দ্রুত।
হোমিওপ্যাথি ওষুধের কাজ করার ধরন আলাদা
অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসায় রোগ অনুযায়ী ওষুধ প্রায় একই। জ্বর হলে প্যারাসিটামল বাধা। তবে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা এমন নয়। এই চিকিৎসাশাস্ত্রে রোগ নয়, রোগীর চিকিৎসা হয়। তাই একই অসুখে ব্যক্তিভেদে ভিন্ন ওষুধ ব্যবহার হতে পারে। পাশাপাশি ওষুধের কাজ করার ধরনও আলাদা। তাই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া হোমিওপ্যাথি ওষুধ খেলে বিপদ হতে পারে বলে জানালেন ডা: আশিস শাসমল।
Disclaimer: প্রতিবেদনটি সচেতনতার উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে। কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।